Breaking News

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ও রবীন্দ্র - স্মারক ডাকটিকিটের জন্মকথা

ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ও রবীন্দ্র - স্মারক ডাকটিকিটের জন্মকথা

রবীন্দ্রনাথ যখন ৬৩, তখনই তাঁর কাব্যকাননে প্রস্ফুটিত হয়েছিল ‘পূরবী ’ কাব্যের কবিতাগুলি। বয়সের ভার কবির চিরহরিৎ মনে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি এই রোমান্টিক কবিতাগুলি সৃষ্টির পথে। যে বিদেশিনী রমণীর সংস্পর্শলাভের মাধুর্যে সেই পড়ন্তবেলায় কবির জীবননদীতে কুলুকুলু ধ্বনি শোনা গিয়েছিল রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘ বিজয়া ’। তিনি দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনীয় অভিজাত বিদুষী রমণী ভিক্টোরিয়া। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। বয়স তখন তাঁর চৌত্রিশ। কীভাবে একটি অসমবয়সী সম্পর্ক গভীরতায় মণ্ডিত হয়েছিল সে কল্পকথা ছিলনা। কবি তাঁকেই উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর ‘পূরবী’ কাব্য।


আর্জেন্টিনায় ও রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ পালিত হয়েছে নানান কর্মসূচির মাধ্যমে। লেকচার, সেমিনার, গান, নাটক, রবীন্দ্র জীবন ও সাহিত্য নিয়ে গ্রন্থ প্রকাশ, কবির নামে রাস্তার নামকরণ— কিছুই বাদ গেল না। সমস্ত উদ্যোগ আর উৎসাহের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন ওকাম্পো। তিনি সেখানকার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, লেখক আর পত্রিকা সম্পাদক। সরকারের ওপরে তাঁর প্রভাব কম নেই। একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, আর্জেন্টিনার ডাকবিভাগ একটি রবীন্দ্র শতবার্ষিকী স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল। সেই ডাকটিকিটখানি ভারতীয় ভাকবিভাগ প্রকাশিত স্ট্যাম্পের প্রায় অনুরূপ হয়ে গেল। কীভাবে এটা ঘটেছিল? ১৯৬১ সালের ১৪ মে এক চিঠিতে ভারতীয় রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা কৃষ্ণ কৃপালনীকে লিখেছেন



শ্মশ্রু তাঁর ঋষিকল্প রূপের সঙ্গে ছিল সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ । আর , ভারতীয় ডাকটিকিটখানির নকশাবিদ ছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায় , যার নৈপুণ্য সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন উঠতে পারে না । তবে আর্জেন্টিনার ডাকটিকিটের নকশাবিদের নাম জানা যায়নি। ডাকটিকিটের জন্য ফোটো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ওকাম্পো জেনে - বুঝে একই ছবি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন। সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর অবিচল শ্রদ্ধা ও ভারতের প্রতি তাঁর গভীর একাত্মতা বোধের প্রকাশ এইভাবে ঘটেছিল। একটি চিঠিতে তিনি নন্দিতা ও কৃষ্ণ কৃপালনীকে লিখেছিলেন- You don't know how much I love your country and your people . অন্যত্র তিনি লিখেছিলেন— ‘গোলাপে ভরা সেই বসন্ত দিনের মতো আজও তিনি আমার



১৯২৪ সাল। কবি ও ভিক্টোরিয়া উভয়েই নিবিড়ভাবে কাছাকাছি হবার অলৌকিক সুযোগ পেয়েছিলেন প্রায় দু'মাস, ভিক্টোরিয়ার সান ইসিদ্রো বাসভবনে। তারও ছ'বছর পর , ১৯৩০ সালে শিল্পকলা রসিকদের শহর প্যারিসে। রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতে আঁকা চিত্রাবলীর প্রদর্শনীর আয়োজন করার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দিলেন ভিক্টোরিয়া। বলাবাহুল্য, এই কলারসিক রমণী রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রথম চিনে নিয়েছিলেন এক প্রতিভাবান সৃজনশীল শিল্পীকে। কিন্তু দীর্ঘজীবী ভিক্টোরিয়ার ঊননব্বই বছর বয়স পর্যন্ত কীভাবে তাঁর জীবনের ধ্রুবতারা হয়ে রইলেন, সে এক পরম বিস্ময়কর আত্মিক ঘটনা। ১৯৬১ সাল। স্বদেশে ও বিদেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে সাড়ম্বরে। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ৭০ পেরিয়েছেন।



stamp was Issued and I have sent you some cards that were sold in the streets of Buenos Aires. Many people were buying them, and when some philatelists recognised me at The Central Post Office, they asked me to sign many of those cards because I had known Tagore. 'দুটি ভিন্ন দেশের ডাকটিকিটের অবয়বের মিল থাকার নেপথ্যে যে কারণে ছিল সেটা ছিল বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। কবির ধ্যান গম্ভীর বৌদ্ধিক চেতনার রূপ সৃষ্টি হয়েছিল, কারণ দু - দেশের নকশাবিদদ্বয় একই ফটোর কপি থেকে স্ট্যাম্প তৈরি করেছিলেন। ছবিটি রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য ছবি থেকে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। ১৯২৪ সালে কবির ছবিটি তোলা হয়েছিল ইতালির মিলান শহরে। তাঁর নির্মিলিত আঁখি, প্রলম্বিত কেশ ও খুব একান্তে। 



'আকাশবাণীর এক সাক্ষাৎকারে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল— সান ইসিদ্রোয় থাকবার সময়ে - আমাকে বাংলায় কয়েকটি শব্দ - শিখিয়েছিলেন কবি। আমি মনে রেখেছি শুধু একটি। আর ভারতবর্ষকে আমি সেইটি বলে যাব— ‘ভালবাসা।’ তবে কী - এক সংকোচের বশবর্তী হয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় এবং তাঁর প্রয়াণের পরে আন্তরিক আহ্বান সত্ত্বেও ভারতভূমিতে একটি বারের জন্য পদার্পণ করেন নি। এমনকি, বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ উপাধি ‘ দেশিকোত্তম' গ্রহণ করতেও আসেন নি । অনেক বছর পরে, ইন্দিরা গান্ধি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং পদাধিকারবলে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, তিনি উদ্যোগী হয়ে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর হাতে সেই সম্মানপত্র অর্পণ করে আসেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ