Breaking News

সুনীল-মহেশের গোলে সেমিফাইনালে ভারত


সুনীল-মহেশের গোলে সেমিফাইনালে ভারত


ভারতীয় ফুটবলের তিনিই ভরসা। ত্রাতাও তিনি। শনিবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিরুদ্ধে গোল করে ও করিয়ে আরও একবার তা প্রমাণ করলেন সুনীল ছেত্রী। ২-० গোলে জিতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ভারত পৌঁছে গেল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের শেষ চারে।


পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে চূর্ণ করে যাত্রা শুরু করেছিল ভারতীয় দল। ফিফা ক্রমতালিকায় ৭৩ ধাপ পিছিয়ে থাকা নেপালের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে কোচ ইগর স্তিমার্চ জানিয়েছিলেন, প্রতিপক্ষকে একেবারেই হাল্কা ভাবে নিতে চান না। অথচ শনিবার ভারতের প্রথম একাদশ দেখে অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে দল খেলেছিল, তার মধ্যে থেকে সুনীল, সাহাল আব্দুল সামাদ ও অনিরুদ্ধ থাপা শুধু ছিলেন এই ম্যাচে। আকর্ষণীয় ব্যাপার হল রক্ষণ পুরোপুরি বদলে ফেলেছিল ভারতীয় দল। 


পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোলে খেলেছিলেন অমরিন্দর সিংহ। চার ডিফেন্ডার ছিলেন প্রীতম কোটাল, সন্দেশ জিঙ্ঘন, আনোয়ার আলি ও শুভাশিস বসু। শনিবার তাঁরা সকলেই রিজার্ভ বেঞ্চে। গোলে ফেরেন গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু। চার ডিফেন্ডার হলেন রাহুল ভেকে, মেহতাব সিংহ, আকাশ মিশ্র ও নিখিল পুজারি। নেপালের বিরুদ্ধে রণনীতিও বদলে ফেলেছিলেন ইগর নির্বাসিত থাকায় এ দিন প্রধান কোচের ভূমিকা পালন করা মহেশ গাউলি। ৪-৩-৩ আক্রমণাত্মক ছক বেছে নেন তিনি


কিন্তু লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে, আশিক কুরুনিয়নের অভাবেই হয়তো প্রথমার্ধে ভারতের খেলায় পরিচিত ছন্দ দেখা যায়নি। গত আট বছরে পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে দু'দল। একবারও ভারতকে হারাতে পারেনি নেপাল। দু'বছর আগে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রুপ পর্বে ভারত জিতেছিল ১-০ গোলে। ফাইনালে নেপালকে হারিয়েছিল ৩-০ গোলে। তার আগে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে সুনীলরা জিতেছিলেন ২-১ গোলে। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে একটি ম্যাচ গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়েছিল। অন্য ম্যাচে ২-০ জিতেছিল ভারত। শনিবারও শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন সুনীলরা। ডান প্রান্ত থেকে অনিরুদ্ধ সেন্টার করেছিলেন। কিন্তু উদান্তকে আটকে দেন নেপালের অনন্ত তামাং।


১৫ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করেন সামাদ। এক মিনিটের মধ্যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটান তিনি। ১৭ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল নেপাল। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া অরিক বিস্তার শট শরীর ছুড়ে অনবদ্য দক্ষতায় বাঁচান গুরপ্রীত। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে ছন্দ নষ্ট হতে শুরু করে ভারতের খেলার। ক্ষিপ্ত সুনীলকে দেখা যায় সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলছেন। সম্ভবত তাঁদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। এক বার তো নিখিলকে রীতিমতো ধমক দিতেও দেখা যায় ভারত অধিনায়ককে। তাতেই হয়তো হুঁশ ফেরে ভারতীয় দলের ফুটবলারদের। ৪০ মিনিটে উদান্তর নেওয়া অসাধারণ শট কোনও মতে বাঁচান নেপালের গোলরক্ষক! প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ভাবে।


ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে গত রবিবার আন্তঃমহাদেশীয় কাপের ফাইনালে ইগরের ধমকে লেবাননের বিরুদ্ধে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া ভারতকে দেখা গিয়েছিল। শনিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে নেপালের বিরুদ্ধেও তার ব্যতিক্রম হল না। কোচ নির্বাসিত থাকায় তাঁর ভূমিকা সম্ভবত নিয়েছিলেন সুনীল। দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণের ঝড় তুলতেই চাপ বাড়তে শুরু করে নেপালের রক্ষণে। ৬১ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে উঠে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে সুনীলের উদ্দেশে বল দেন মহেশ। ঠান্ডা মাথায় ভারতকে এগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দেশের জার্সিতে ৯১তম গোলও করে ফেললেন ভারত অধিনায়ক। 


দু'মিনিটের মধ্যেই জোড়া পরিবর্তন করেন ভারতের কোচ। উদান্তর জায়গায় ছাংতে ও রোহিত কুমার পরিবর্তে জিকসন সিংহ নামতেই আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়ে ভারতীয় দলের। ফলশ্রুতি ৭০ মিনিটে গোল মহেশের। নেপথ্যে সেই সুনীল। ভারত অধিনায়কের হেড ক্রসবারে লাগে। ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আইএসএলে দুর্দান্ত খেলা মহেশ। ভারতের পরের ম্যাচ আগামী মঙ্গলবার কুয়েতের বিরুদ্ধে। নেপালকে হারিয়ে ইতিমধ্যেই শেষ চারে পৌঁছে যাওয়া সুনীলদের কাছে এই ম্যাচ কার্যত নিয়মরক্ষার। যদিও কুয়েতকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল খেলাই পাখির চোখ ভারতের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ